স্থুলতাকে বলা চলে বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অবহেলিত এক রোগ। স্থুলতা পরিহারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী উপায় ব্যায়াম। স্থুলতা সমস্যা বাদ দিলেও ব্যায়াম যে কারো শরীর স্বাস্থ্য সুগঠিত রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকরী এক উপায়। ব্যায়াম করার অভ্যাস আপনাকে শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক প্রশান্তি দেয়ার ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিমাণে ভূমিকা রাখবে। ব্যায়াম করা নিছক কোনো শখের ব্যাপার নয়, রীতিমতো চর্চার ব্যাপার। ব্যায়াম শুরুর পরিকল্পনা তো করলেন, কিন্তু একে ধরে রাখতে দৃঢ় মানসিক সংকল্প এবং দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনারও দরকার রয়েছে। আপনার যদি ব্যায়াম করার আগ্রহ থাকে, তবে এর শুরুতেই যা কিছু দরকার, তার খুঁটিনাটি জেনে নিন এই লেখায়-
কেবল ব্যায়াম নয়, বরং যে কোনো কাজের ক্ষেত্রেই সেই কাজের পেছনের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা থাকা খুব জরুরি। তাই ব্যায়াম করার পরিকল্পনার আগেই আপনার জেনে নেয়া দরকার আপনি ঠিক কেন ব্যায়াম করবেন। সবচেয়ে বড় কথা, নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে আপনার শরীর অনেক সুস্থ থাকবে। একইসঙ্গে ওজনের ভারসাম্য, পেশি গঠনসহ অনেক জটিল রোগের ক্ষেত্রে (স্থুলতা, ডায়াবেটিস) উপকারে আসতে পারে ব্যায়ামের অভ্যাস। এছাড়াও গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ব্যায়ামের ফলে আপনার মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটতে পারে, বিষণ্ণতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে এটি বেশ সহায়ক। এমনকি ঘুমের বেলাতেও মিলবে এর সুফল।
ব্যায়ামের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে থাকলে কিছু বিষয় অবশ্যই আগে থেকে নিজের মাঝে যাচাই করে নেয়া উচিত। যেমন-
যদিও এই ব্যাপারে অনেকেই অবহেলা করেন, তবে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নেওয়া দরকার। বিশেষ করে যারা প্রচন্ড ভারী আর পরিশ্রম করার মতো ব্যায়াম করার পরিকল্পনায় আছেন, তাদের জন্য এটি বিশেষ উপযোগী।
একইসঙ্গে, আপনার প্রতিদিনের ব্যায়ামের প্রক্রিয়াকে আরো বেশী কার্যকরী করে তুলবে। সেইসঙ্গে আপনার নিজের জন্য এবং আপনার ট্রেইনারের জন্যেও সহায়ক হতে পারে একজন ডাক্তারের পরামর্শ। কেননা, এর ফলে আপনি সহজেই ধারণা পাবেন, আপনার কি ধরণের ব্যায়াম করা দরকার বা দৈনিক আপনার শারীরিক সক্ষমতা ঠিক কতখানি।
আপনি যখন একবার নিয়মিত ব্যায়াম করার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন, এবার আপনার দরকার একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। যে পরিকল্পনায় অবশ্যই এমন লক্ষ্য নির্ধারণ করা দরকার, যা আপনার পক্ষে সত্যিই অর্জন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়, শুরুতেই ছোট ছোট লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিলে। পরবর্তীতে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটলে লক্ষ্য বড় করা যেতে পারে।
ধরা যাক, আপনার লক্ষ্য ৫ কিলোমিটার দৌড়ানো। এক্ষেত্রে আগে ছোট ছোট কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নিন। এই ধরণের ছোট লক্ষ্য আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা যেমন বাড়াবে, তেমনি আপনাকে পরবর্তী লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পর্যাপ্ত উৎসাহ যোগাবে।
ব্যায়ামের পুরো সুবিধা নিতে চাইলে একে অভ্যাসে পরিণত করুন। যদি কেউ ব্যায়াম করাটা নিজের অভ্যাসে পরিণত করা বা দীর্ঘদিন একই নিয়মে চালিয়ে যেতে সক্ষম হন, তবে সাফল্যের সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়। এক গবেষণায় দেখা যায়, আপনার কোনো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যদি তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর কোনো অভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে নেওয়া সম্ভব হয়, তবে সেটা দীর্ঘদিন বজায় রাখার দারুণ একটি উপায়।
সেইসঙ্গে বলে রাখা দরকার, একটা রুটিন করে নেওয়া কিংবা প্রতিদিন একইসময়ে ব্যায়াম করার অভ্যাস আপনার অভ্যাস গড়ে তোলা এবং সেটা দীর্ঘদিন চালু রাখার দারুণ একটি উপায়।
সোমবারঃ মাঝারি গতিতে ৪০ মিনিট দৌড়ানো কিংবা দ্রুত হাঁটা
মঙ্গলবারঃ বিশ্রাম
বুধবারঃ দশ মিনিট দ্রুত হাঁটা। এরপর নিচের ব্যায়ামগুলো পরপর-
চক্র ১- ৩ সেটে প্রতি পায়ে ১০ বার লাঞ্জ, ১০ বার পুশআপ, ১০ বার সিটআপ
চক্র ২- ৩ সেটে ১০ বার চেয়ার ডিপ, ১০ বার জাম্পিং জ্যাক, ১০ এয়ার স্কোয়াট
বৃহস্পতিবারঃ বিশ্রাম
শুক্রবারঃ ৩০ মিনিট সাইক্লিং কিংবা মাঝারি গতিতে দৌড়ানো
শনিবারঃ ৪০ মিনিটের জন্য জগিং, দৌড়ানো কিংবা হাঁটা
শরীরে পানির ভারসাম্য রাখার জন্য সারাদিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোচ্চ সুফল পেতে চাইলে ব্যায়ামের মাঝেই পানি পান করা যেতে পারে। বিশেষ করে যখন তাপমাত্রা বেশি থাকে। এছাড়াও, ব্যায়ামের পর পানি পানের মাধ্যমে আপনার শরীরের ক্লান্তি দূর হতে পারে সেইসঙ্গে পরের অনুশীলনের জন্য আপনি প্রস্তুত হয়ে উঠবেন।
আপনার ব্যায়াম কার্যক্রমের যথাযথ ফল পেতে হলে অবশ্যই পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিন। শরীরে যথেষ্ট শক্তি পেতে, সেইসঙ্গে ব্যায়ামের সুফল পেতে সব ধরণের খাদ্য গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিন। যেমন, শর্করা গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে আপনার পেশী ব্যায়ামের পূর্বে যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে।
একইসঙ্গে ব্যায়ামের পরপরই গ্লাইকোজেন ঘাটতি পূরণ করতে এবং অ্যামিনো অ্যাসিড শোষণের ক্ষেত্রেও শর্করা ভূমিকা রাখে। এছাড়াও ব্যায়াম শেষে পেশি ক্ষয়পূরণ গঠন বা যে কোনো টিস্যুর ক্ষতিপূরণ করতে পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণের দিকে মনোযোগ দিন।
শেষে বলতে হয়, স্নেহ জাতীয় খাদ্যের কথা। নিয়মিত পরিমিত পরিমাণের স্নেহ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ আপনার জমে থাকা চর্বি ঝরাতে এবং বেশিক্ষণ আপনাকে কার্যক্ষম রাখার বেলায় সাহায্য করবে।
ব্যায়াম শুরুর আগে ওয়ার্মআপ করে নেওয়া খুবই দরকারী। হালকা ওয়ার্মআপ আপনাকে ইনজুরি থেকে দূরে রাখবে সেইসঙ্গে আপনার কার্যক্ষমতাও বাড়াতে সাহায্য করবে। একইসঙ্গে ওয়ার্মআপের মাধ্যমে শরীরের সহনশীলতা বাড়ানো এবং ব্যথা উপশম করাও সম্ভব।
সাধারণ কিছু কাজের মাধ্যমে আপনার ব্যায়াম শুরু করতে পারেন। যেমন হাত পা নাড়ানো বা লাঞ্জ। বিকল্প হিসেবে চাইলে যে ব্যায়াম করতে চান, তার হালকা চর্চা করা যেতে পারে। যেমনঃ দৌড় শুরুর আগে হালকা হেঁটে নেওয়া।
কিছুটা বিশ্রাম আপনার জন্য খুবই দরকারী। কারণ, ব্যায়ামের পর বিশ্রামের মাধ্যমেই আপনার শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। কয়েক মিনিটের জন্য শান্ত হয়ে বসা আপনার স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনে। এমনকি আপনার পেশীর ক্লান্তিও কমাতে সাহায্য করবে। বিশ্রামের এই ধারণা মাঝে হালকা হাঁটাহাটি বা স্ট্রেচিংও অন্তভুর্ক্ত করা যেতে পারে।
আপনি যদি প্রতিদিনই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন, তবে আপনার সর্বোচ্চ সীমা সম্পর্কে ধারণা রাখুন। ব্যায়াম করার সময় যদি অস্বস্তি কিংবা কোনো প্রকার ব্যথা অনুভব করে থাকেন, তবে থেমে যান। আর কিছুটা বিশ্রাম নিন। ব্যথা স্বত্বেও ব্যায়াম চালিয়ে যাওয়া কোন সুফল বয়ে আনবে না। অনেকক্ষেত্রে আপনি অসুস্থও হয়ে যেতে পারেন।সেইসঙ্গে এও মনে রাখা দরকার, খুব কঠোর পরিশ্রম বা দ্রুততার সঙ্গে ব্যায়াম করা খুব জরুরী কিছু নয়। ধীরে ধীরে উন্নতি করা আপনার রুটিন মেনে চলা এবং সুফল পেতে সাহায্য করবে।
Copyright © 2021 SKINCARE SHOP - Developed By SKINCARE SHOP.
Copyright © 2021 SKINCARE SHOP - Developed By SKINCARE SHOP.