স্কিন প্রধানত ৫ ধরনের হয়ে থাকে – ড্রাই, নরমাল, অয়েলি, কম্বিনেশন এবং সেনসিটিভ। আমাদের মত এশিয়ান কান্ট্রিগুলোতে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী দেখা যায় অয়েলি স্কিন। আর তৈলাক্ত ত্বকের নারীদের মধ্যে তাদের স্কিন নিয়ে থাকে অনেক প্রশ্ন। তার মধ্যে কমন প্রশ্নটি হলো, অয়েলি স্কিনের জন্য কোন ময়েশ্চারাইজার-টি ভালো? এটার উত্তর পাওয়ার পরেও আরো প্রশ্ন মনে থেকে যায়। তার মধ্যে একটি হলো, আমাকে স্যুট করবে তো? এরকম হাজারো প্রশ্ন আমাদের মনে ঘুরপাক খায়, তাই না?
“ওই আপুটার অয়েলি স্কিন, সে তো অমুক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে। তার স্কিনে ভালো কাজ করেছে। তার মানে আমার জন্যেও ভাল হবে এটা। কিনেই ফেলি।”- এই বোকামি আমি আমার লাইফে বেশ কয়েকবার করে ফেলেছি। আর ফলাফল হয়েছে শূন্য। আর সাথে উপহার পেয়েছিলাম পিম্পল। জানিয়ে রাখি, আমার স্কিন টাইপও অয়েলি।
কিভাবে বুঝবেন আপনার অয়েলি স্কিন?
আচ্ছা, ময়েশ্চারাইজার কোনটা ভালো তা জানার আগে এ নিয়ে একটু রিসার্চ করলে কেমন হয়? রিসার্চ বরং একটু পরে করি। স্কিন অয়েলি নাকি তা টেস্ট করে দেখতে হবে-
১. সকালে ঘুম থেকে উঠেই আপনার মুখের স্কিন ক্লিন না করা অবস্থায় হাত দিয়ে দেখুন। যদি পুরো মুখটা তেলতেলে লাগে, তবে বুঝবেন আপনার স্কিন টাইপ অয়েলি।
২. আরেকটি টেস্ট করতে পারেন। মুখ ফেইস ওয়াশ দিয়ে ক্লিন করে নিয়ে ৩-৪ ঘন্টা মুখে কোনো টোনার, ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন না। মুখটা খালি রাখবেন। ৩-৪ ঘন্টা পর একটা ব্লটিং পেপার বা টিস্যু পেপার নিবেন। এটি দিয়ে মুখে আস্তে আস্তে প্রেস করবেন। যদি দেখেন, মুখের প্রত্যেকটা অংশে প্রেস করলেই কম বেশী অয়েল ব্লটিং পেপার-এ চলে এসেছে, তবে বুঝে নিবেন আপনার স্কিন অয়েলি।
আমি আবারও বলছি, শুধু ‘টি জোন’ নয় বরং পুরো মুখে অয়েল দেখা যাচ্ছে কিনা সেটাই চেক করুন। শুধু টি জোনে অয়েল দেখা গেলে আপনার হচ্ছে কম্বিনেশন স্কিন।
ময়েশ্চারাইজার-এ কোন ইনগ্রেডিয়েন্টস থাকলে ভালো?
স্কিন টাইপ অয়েলি কিনা, তা তো বুঝলাম। এবারে আসি ময়েশ্চারাইজার-এ। বাজারেতো নানান রকমের ময়েশ্চারাইজার রয়েছে। তার মধ্যে আপনার জন্য পারফেক্ট ময়েশ্চারাইজার-টি বেছে নেওয়াটাও একটা চ্যালেঞ্জ-এর ব্যাপার। তাই ময়েশ্চারাইজার-এর ইনগ্রেডিয়েন্টস-এর দিকেও খেয়াল রাখা কিন্তু মাস্ট। কারণ, যে ইনগ্রেডিয়েন্টস দিয়ে ময়েশ্চারাইজার-টি তৈরী, তা অয়েলি স্কিনের জন্য ভালো কিনা তা জেনে রাখা দরকারী। এতে পারফেক্ট ময়েশ্চারাইজার-টি বাঁছতে আপনারই সুবিধা হবে। তো, চলুন এবার একটু ইনগ্রেডিয়েন্টস নিয়ে কথা বলা যাক।
১. গ্লাইকলিক অ্যাসিড (Glycolic acid)
গ্লাইকলিক অ্যাসিড-কে ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে অয়েলি স্কিনের ‘পাওয়ার হাউজ’ বলা হয়। এটি ময়েশ্চারাইজার-এ থাকলে স্কিনের অতিরিক্ত তেল প্রডিউস করা কমায়, পোর বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে এবং স্কিনকে ব্রেকআউট থেকে রক্ষা করে।
২. হাইলুরনিক অ্যাসিড (Hyaluronic acid)
হাইলুরনিক অ্যাসিড অয়েলি স্কিনের জন্য বেশ ভালো কাজ করে। এটি বেশ লাইটওয়েট। ময়েশ্চারাইজার-এ এটি থাকলে স্কিনের অয়েল কন্ট্রোলের পাশাপাশি পোর বন্ধ হয়ে যাওয়া রোধ করে, স্কিনকে সফট এবং স্মুদ করে তোলে।
৩. ডাইমেথিকন (Dimethicone)
ডাইমেথিকন একইসাথে অয়েল কন্ট্রোল এবং ময়েশ্চারাইজিং-এর কাজ করে। এটি স্কিনের এক্সট্রা শাইন কন্ট্রোল করে।
এই ইনগ্রেডিয়েন্ট-গুলো ময়েশ্চারাইজার-এ থাকলে সেগুলো অয়েল স্কিনের অধিকারীদের জন্য বেশ ভালো। এছাড়াও ল্যাকটিক অ্যাসিড, স্যালিসিলিক অ্যাসিড ইত্যাদি গুলোও অয়েলি স্কিনের জন্য বেশ ভালো। তবে আরো কিছু বিষয় মাথায় রাখবেন। অয়েলি স্কিনের অধিকারীদের অনেকেরই একনির প্রবলেম থাকে। আর তাই এই স্কিন কেয়ার করা খুব একটা সহজ কাজ নয়।
অয়েলি স্কিনের ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে খেয়াল রাখবেন
তা যেন লাইটওয়েট হয়, এতে যেন এসপিএফ (SPF) থাকে এবং সবসময় অয়েল বেইজড, থিক, ক্রিমি ধরনের ময়েশ্চারাইজার অ্যাভয়েড করবেন। জেল বা লাইট লোশন বেইজড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের চেষ্টা করবেন। অ্যালার্জি বা র্যাশ এড়াতে ময়েশ্চারাইজার-টি হাতে টেস্ট করে কিনতে পারেন। বিশেষ করে যাদের সেনসিটিভিটি-এর সমস্যা রয়েছে।
এবার বলবো, অয়েলি স্কিনের ভালো কিছু ময়েশ্চারাইজার নিয়ে!
সাজগোজের ইনবক্স-এ আপুরা এ ধরনের প্রশ্ন প্রচুর করে থাকেন। তাই আমি আপনাদের ভালো কিছু অয়েলি স্কিনের ময়েশ্চারাইজারের নাম এখন সাজেস্ট করব। এর মধ্যে থেকে দেখে, শুনে, বুঝে নিয়ে আপনি বেছে নিতে পারবেন আপনার জন্য পারফেক্ট ময়শ্চারাইজার-টি।
১. Simple Kind to Skin Hydrating Light Moisturiser
এই ময়েশ্চারাইজার-টা অয়েলি স্কিনের জন্য বেশ ভালো। এটা অয়েল কন্ট্রোলের পাশাপাশি স্কিনকে হাইড্রেট এবং ময়েশ্চারাইজ করে। এটি স্কিনে দ্রুত শোষিত হয়, পোর বন্ধ করে দেয় না এবং স্কিনকে স্মুদ করে তোলে। এতে কোনো হার্শ কেমিক্যাল, আর্টিফিশিয়াল কালার বা স্মেল নেই। এটির দাম পড়বে- ৭৩০/- টাকা।
২. Neutrogena Visibly Clear Spot Proofing Oil Free Moisturiser
এটিও অয়েলি স্কিনের জন্য বেশ ভালো। এটি স্কিনে ম্যাট ফিনিশ দেয় এবং সাথে সাথে স্কিনে হওয়া ব্রেকআউট এবং স্পটের সাথে লড়াই করে। এতে আছে স্যলিসিলিক অ্যাসিড, যা অয়েলি স্কিনের জন্য ভাল কাজ করে। এটির দাম পড়বে- ৮৩০/- টাকা।
৩. Neutrogena VISIBLY CLEAR Pink Grapefruit Oil-Free Moisturiser
এই ময়েশ্চারাইজার-এ রয়েছে পিংক গ্রেপফ্রুট। যা স্কিনের জন্য বেশ উপকারী। এটি স্কিনে একটা ফ্রেশ ফিলিং এনে দেয়। এই ময়েশ্চারাইজার-টি স্কিনকে অয়েল ফ্রি রাখে এবং হাইড্রেট করে। এটি মাইক্রোক্লিয়ার টেকনোলজি সমৃদ্ধ যা স্কিনের ব্লেমিশ, স্পট দূর করে স্কিনকে ক্লিন রাখে। এটির দাম পড়বে- ১০৪০/- টাকা।
৪. The Body Shop Tea Tree Mattifying Lotion
অয়েলি স্কিনের জন্য বডি শপের টি ট্রি রেঞ্জ-টি বেশ জনপ্রিয়। এই ময়েশ্চারাইজার-টিও তেমনভাবে অয়েলি স্কিনের জন্য ভালো একটি ময়েশ্চারাইজার। এতে আছে অরগ্যানিক টি ট্রি অয়েল। এই ময়েশ্চারাইজার-টি স্কিনকে অয়েল ফ্রি করে একটি ম্যাট এবং শাইন ফ্রি ফিনিশ দেয়। স্কিনকে গ্রিজি না করেই হাইড্রেটেড করে তোলে। এটির দাম পড়বে – ১০৮০/- টাকা।
ঘরে তৈরি অয়েলি স্কিনের ময়েশ্চারাইজার
অয়েলি স্কিনের জন্য ভালো কিছু ময়েশ্চারাইজার-এর নাম তো জানিয়ে দিলাম। তবে, অনেকেই চান কেমিক্যাল থেকে স্কিনকে দূরে রাখতে। তাই ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস-কে তারা বেশ প্রাধান্য দেন। তাই ঘরে বসেই একদম ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্টস দিয়ে কিভাবে অয়েলি স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার নিজেই বানাতে পারবেন, সেটিও একটু জানিয়ে দেই।
এজন্য যা যা উপকরণ লাগবে-
- অ্যালোভেরা জেল
- গোলাপ জল
- টি ট্রি অয়েল
যেভাবে তৈরী করবেন-
একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল, ১ চা চামচ গোলাপজল এবং কয়েক ড্রপ টি ট্রি অয়েল নিয়ে ভালোভাবে মিক্স করে নিন। ব্যস!! আপনার অয়েলি স্কিনের জন্য ময়েশ্চারাইজার-টি রেডি।
একটি ক্লিন কৌটায় ময়েশ্চারাইজার-টি ঢেলে নিন। এটি চাইলে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে পারেন। নরমাল ময়েশ্চারাইজার-এর মত করেই এটি মুখ ধুয়ে টোনার লাগানোর পরে ব্যবহার করবেন।