ফেইস ক্লিন করাকে আমরা যেন তেন একটা কাজ মনে করি, তাই না? কিন্তু সঠিক নিয়মে ভালোভাবে ফেইস ক্লিন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! কিন্তু আপনার এই যেন তেন ভাবে করা কাজটির কারণে ফেইসে একনে, রেডনেস, ড্রাইনেস ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হেলদি স্কিনের জন্য কিছু রুলস তো আপনাকে ফলো করতেই হবে। এটি হচ্ছে বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিনের প্রথম ধাপ। মুখ ধোয়ার সময় কোন ভুলগুলো আপনার ত্বককে ড্যামেজ করতে পারে সেটাই আজ আমরা জানবো।
ফেইস ক্লিনিং ডু’স অ্যান্ড ডোন্ট’স
এখন মার্কেটে বিভিন্ন ফর্মুলার ক্লেনজার পাওয়া যায়। জেল, ক্রিম বা ফোমিং ফেইস ওয়াশ, মাইসেলার ওয়াটার, ডাবল ক্লেনজিংয়ের জন্য অয়েল বেইজড ক্লেনজার এগুলো সবই পাওয়া যাচ্ছে। এখন আপনার যদি অয়েলি একনে প্রন স্কিন হয় আর আপনি যদি ভুল কোনো ফেইস ওয়াশ বেছে নেন যেটা আপনার ত্বককে আরও তেলতেলে করে দিচ্ছে, তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলুন তো? সেজন্যই মুখ ধোয়ার সময় কিছু বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে!
মুখ ধোয়ার সময় চুল ভালোভাবে বাঁধুন
চুল অবশ্যই হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে ফেইস ক্লিন করবেন। যদি চুল ভালোভাবে বেঁধে না নেন এতে কিন্তু চিক হেয়ার লাইন, জ-লাইনে ঠিকভাবে ক্লিন হয় না। মুখ ধোয়ার সময় অনেকেই এই বিষয়টি গুরুত্ব দেয় না।
ক্লেনজারের ব্যবহার
আমরা অনেকেই নতুন প্রোডাক্ট কিনেই প্যাকেটের বাইরে নির্দেশাবলী না পড়েই ইউজ করা শুরু করে দেই। আগে সেটা পড়ুন, কতটুকু প্রোডাক্ট কীভাবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে সেটা দেখুন। অনেক ক্লেনজারে লেখা থাকে তালুতে নিয়ে ফোম ক্রিয়েট করে ফেইসে লাগাতে হবে। ধরুন ডিরেকশনে লেখা চার ড্রপ ব্যবহার করুন আর আপনি হাতে নিয়েই তারচেয়ে বেশি পরিমাণে প্রোডাক্ট দিয়ে ফেইসে ম্যাসাজ করা শুরু করলেন! তাহলে ত্বক তো বেশিই ড্রাই হয়ে যাবে। এভাবেই কিন্তু আপনার ত্বক ড্যামেজ হচ্ছে। সেজন্য নির্দেশাবলী পড়ে নিন আগেই। আর এক্সপায়ার ডেটও দেখতে ভুলবেন না।
আগে হ্যান্ড ওয়াশ দিয়ে হাত ধুতে ভুলবেন না!
মুখ ধোয়ার পূর্বে হ্যান্ড ওয়াশ! কিন্তু কেন? আপনার স্কিনে যেসব প্রবলেম দেখা যায় তার একটি বড় কারণ হচ্ছে হাত না ধুয়েই ফেইস ক্লিন করা! আমরা অনেকেই ফেইস ক্লিনিং করার আগে হ্যান্ড ওয়াশ করি না। এতে করে যতই ভালো ক্লেনজার ব্যবহার করুন না কেন, আপনি কিন্তু সারাদিনের ময়লা ও হাতের নখে লেগে থাকা রোগ-জীবাণু ফেইসে লাগাচ্ছেন। সুতরাং এই বিষয়টি খেয়ালে রাখবেন।
হট ওয়াটার নাকি কোল্ড ওয়াটার?
ডিরেক্ট হট ওয়াটার ব্যবহারে স্কিনের ব্লাড ভেসেল এবং ক্যাপিলারিস ব্রেক হতে পারে। আর কোল্ড ওয়াটার আপনার পোরগুলো বন্ধ করে দেয় এবং অনেকের ক্ষেত্রে ত্বক খুবই ড্রাই হয়ে যায়। তাই অতিরিক্ত হট বা কোল্ড ওয়াটার ব্যবহার না করে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন। এটি স্কিনে সহনীয় এবং এতে স্কিন ভালোভাবে ক্লিন হয়।
মেকআপ কীভাবে রিমুভ করবেন?
যদি একদমই লাইট মেকআপ করেন তাহলে ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। যদি আপনার ব্যবহৃত প্রোডাক্টে অয়েল সল্যুবল ইনগ্রেডিয়েন্ট থাকে, তাহলে প্রথমে মাইসেলার ওয়াটার বা অয়েল ক্লেনজার দিয়ে মুখ ভালোভাবে ক্লিন করুন। এরপর রেগুলার জেল বা ফোম ক্লেনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। ভারি মেকআপ রিমুভালের সময় আগে অয়েল বেইজড ক্লেনজার তুলাতে দিয়ে ফেইসে আস্তে আস্তে প্রেস করে মেকআপ রিমুভ করবেন। অয়েল দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে চাইলে জোজোবা অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে, এটি ন্যাচারাল মেকআপ রিমুভার হিসাবে কাজ করে।
দিনে কয়বার ফেইস ক্লিন করা উচিত?
সাধারণত দুইবার ফেইস ক্লিনিং এর কথা বলে থাকেন ডার্মাটোলজিস্টরা, সকালে এবং রাতে ঘুমানোর আগে। কিন্তু আপনি যদি বাইরে যান, তাহলে কাজ থেকে ফিরে সন্ধ্যায় অবশ্যই ফেইস ক্লিন করবেন। ক্লিন ফেইস নিয়ে ঘুমানো মাস্ট! আর হ্যাঁ ভারি কাজ বা ওয়ার্কআউট করেও মুখ ধোয়া উচিত। ধরুন আপনি সকালে ক্লিন করলেন, এরপর কাজ করার পর ঘাম আর ধুলাবালিতে আপনার ফেইসটা ময়লা হয়ে গেল। তখন কি আপনি রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন? ত্বকে ময়লা নিয়ে বসে থাকলে কিন্তু আপনার স্কিনের ক্ষতি হবে। সুতরাং কাজ এবং সময় বুঝে ফেইস ক্লিনিংয়ের ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন
মুখ ধোয়ার সময় কীভাবে ম্যাসাজ করবেন?
অনেকে সরাসরি ময়লা অথবা ড্রাই ফেইসে ক্লেনজার লাগিয়ে নেয়। আগে মুখ হালকা ভিজিয়ে নিয়ে তারপর ক্লেনজার ব্যবহার করুন। এতে করে ম্যাসাজ করতেও সুবিধা হবে এবং ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার হবে। মুখ ধোয়ার সময় কীভাবে ম্যাসাজ করতে হবে, সেটা এখন জেনে নিন।
১) জেল বা ফোম বেইজড ক্লেনজার আপনার হাতের ভেজা তালুতে নিয়ে ফোম তৈরি করুন। তারপর প্রথমে দুই গালে, কপাল, নাক এবং চিন এরিয়াতে লাগিয়ে নিন।
২) তারপর আঙ্গুল দিয়ে আপওয়ার্ড সার্কুলার মোশনে জেন্টলি ম্যাসাজ করুন। দুই গালে অ্যান্টি ক্লকওয়াইজ সার্কুলারভাবে ম্যাসাজ করবেন।
৩) কপালের সেন্টার পজিশনে দুই হাতের দুই আঙ্গুল দিয়ে সার্কুলারভাবে ম্যাসাজ করতে করতে দুই গালের একদম পাশে নামিয়ে নিয়ে আসুন।
৪) টি জোন অর্থাৎ ভ্রু এর উপরে ও নাকে আঙ্গুলের টিপ দিয়ে সার্কুলার মোশনে ম্যাসাজ করুন। নাকের দুই পাশেও ম্যাসাজ করতে হবে।
৫) আমরা অনেকেই জ-লাইন অর্থাৎ চোয়ালে ক্লেনজার অ্যাপ্লাই করি না। এটা অবশ্যই করতে হবে। গলা থেকে চোয়াল পর্যন্ত উপরের দিকে আর চিন এবং ঠোঁটের আশপাশে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জেন্টলি ম্যাসাজ করুন।
ফেইস ম্যাসাজের জন্য এখন বাজারে অটোমেটেড বা ম্যানুয়াল অনেক ধরনের ব্রাশ পাওয়া যায়, যা দিয়ে সহজেই ফেইস ক্লিন করতে পারবেন হাতের স্পর্শ ছাড়াই! যে যেটাতে কমফোর্ট ফিল করেন, সেটি ব্যবহার করবেন। যদি ফেইসে একনে থাকে সেক্ষেত্রে আঙুল ব্যবহার করুন। অনেকে লুফাহ বা মেকআপ ক্লিনিং স্পঞ্জ ব্যবহার করে। যেটাই ইউজ করবেন, সবসময় সেটা ক্লিন এবং ড্রাই রাখবেন। নাহলে তাতে ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে যা আপনার জন্য ক্ষতিকর।
আপনার টাওয়াল ক্লিন তো?
অনেকেই একটি কমন ভুল করে এবং সেই ভুলের জন্যও স্কিন ড্যামেজ হতে পারে। সেটি হচ্ছে ফেইস ক্লিন করেই হাতের সামনে যেটা পান তা দিয়ে মুছে ফেলেন! তাহলে এতক্ষণ যেসব স্টেপ ছিল সবই ব্যর্থ। আর যাদের ফেইসে ব্রণ বা র্যাশ হয়, তাদের ক্ষেত্রে তো এটি আরও জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে। ফেইসের জন্য সবসময় আলাদা টাওয়াল ব্যবহার করবেন। যেটি দিয়ে বডি মোছা হয়, সেটি দিয়ে ফেইসও মুছলে তাতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের চান্স বেশি থাকে। আপনি চাইলে টিস্যু দিয়ে হালকা করে চেপে চেপে মুছে নিতে পারেন।
ফেইস ক্লিনিংয়ের পরবর্তী ধাপ
১. ফেইস ক্লিনিংয়ে আমরা যে ভুলটি সচরাচর করি সেটা হচ্ছে ইচ্ছেমতো উপরে নিচে ঘষে ম্যাসাজ করে ধুয়ে ফেলি। কিন্তু আপনি যদি ডাউনওয়ার্ড মোশনে স্কিনে ম্যাসাজ করেন তাহলে ফেইসে রিংকেল দেখা দিতে পারে এবং চামড়া ঝুলে যাতে পারে। এতে ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কারও হয় না, তখন বাকি স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো (টোনার, সিরাম ইত্যাদি) স্কিনে ঠিকভাবে পেনিট্রেশন হবে না।
২. ক্লেনজার অনেকেই ফেইসে নিয়ে রাব করে অর্থাৎ ঘষে ঘষে ময়লা উঠাতে চান। মনে রাখবেন আপনার ফেইসের স্কিন বডির অন্যান্য স্কিনের চেয়ে পাতলা এবং সেনসিটিভ। সুতরাং ম্যাসাজ করবেন জেন্টলি, যাতে স্কিনের প্রোটেক্টটিভ লেয়ারের ড্যামেজ না হয়।
৩. আমাদের চোখ এবং এর চারপাশের এরিয়ার স্কিন আমাদের ফেইসের অন্যান্য অংশের স্কিনের চেয়ে পাতলা। তাহলে ভাবুন কতটা সেনসিটিভ! সুতরাং খুবই আলতোভাবে রিং ফিংগার দিয়ে এই এরিয়া ক্লিন করবেন। ফেইস ক্লিনিং শেষে এখানে ময়েশ্চারাইজার এবং আই ক্রিম ট্যাপিং করবেন।
৪. মুখ ধোয়ার সময় তাড়াহুড়ো করবেন না। ফেইস ম্যাসাজ করবেন ৩০ সেকেন্ডে এবং পরবর্তী ৩০ সেকেন্ডে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এখন আপনি যদি বেশি সময় ধরে ফেইস ম্যাসাজ করতে থাকেন তাহলে প্রোটেক্টটিভ লেয়ার ড্যামেজ হবে এবং ওভারওয়াশ হয়ে যাবে!
এতগুলো স্টেপ পড়ে নিশ্চয়ই ভাবছেন সারদিনে দুইবার মাত্র ফেইস ক্লিন করবো আর তাতেই এতকিছু! ট্রাস্ট মি, এতে দশ মিনিটও লাগবে না। আর আপনি যদি এসব ব্যাপারে একটু খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন স্কিনের অনেক ইমপ্রুভমেন্ট হয়েছে। স্কিন নিয়ে আপনার কমপ্লেইন জিরোতে নেমে আসবে! মুখ ধোয়ার সময় কোন ভুলগুলো আপনার ত্বককে ড্যামেজ করতে পারে সেগুলো আমরা জানলাম। অথেনটিক প্রোডাক্ট কিনতে আপনারা চাইলে SKINCARE SHOP থেকে কিনতে পারেন।